[ Self Reflection ] Knowing yourself is the beginning of all wisdom



৩৪ বছর বয়সে এসে আমি একটাই জিনিস বুঝেছি, জীবন মানে সবসময় দৌড় নয়। কখনও কখনও থেমে দাঁড়ানোও সাহসের নাম। ১৩ বছর ধরে একটা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছি, হাজারো মানুষের সঙ্গে কাজ করছি, তবু আজকাল আমি সবচেয়ে বেশি সময় দিই নিজেকে বোঝার চেষ্টা করতে। এরিস্টটল বলেছিলেন, “Knowing yourself is the beginning of all wisdom.” এই কথাটাই এখন আমার জীবনের কেন্দ্র।

এখন বুঝতে পারছি, জীবন আসলে দৌড় নয়, একটা পথচলা। আগে ভাবতাম সফলতা মানে বড় কিছু পাওয়া, এখন জানি সফলতা মানে নিজের ভেতরে শান্তি খুঁজে পাওয়া। জীবনের এই পর্যায়ে এসে আমি বুঝেছি, মানুষকে বদলানো যায় না, কিন্তু নিজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো যায়। তাই আমি এখন সহজভাবে বাঁচতে চাই, জটিলতা কমিয়ে, সময়ের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে। কাজ, সম্পর্ক আর নিজের যত্ন, এই তিনটা জিনিসের মধ্যে ভারসাম্য রাখাটাই এখন আমার আসল লক্ষ্য।

মানুষের জীবনে সার্কেল যত বড় হয়, চাপও তত বাড়ে। আমি এখন ছোট সার্কেলেই স্বস্তি পাই, যেখানে সবাই নিজের মতো স্বাধীন, কিন্তু কেউ কারো জন্য ক্ষতিকর নয়। আমি এমন মানুষদের সঙ্গে থাকতে চাই, যাদের উপস্থিতিতে মন ভালো হয়, ক্লান্তি আসে না। এখন আর কারো মন জয় করতে চাই না, শুধু মন পরিষ্কার রাখতে চাই। আমরা সবাই আলাদা জগতে বাঁচি, কেউ কারো পুরোটা বুঝি না, তবু যদি পারি একে অপরের জীবনে আলো দিতে, সেটাই সবচেয়ে বড় সম্পর্ক। আমি বিশ্বাস করি, বন্ধুত্ব বা ভালোবাসা মানে কারো স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া নয়, বরং তাকে ভালো থাকতে শেখানো।

জীবনকে আমি এখন কাজের মাধ্যমেই সহজ করছি। প্রতিদিন সকালে দৌড়ানো চেষ্টা করি, যা আজীবন করতে চাই, শরীরের সঙ্গে কথা বলি। বই পড়ি, যেন মনটা শান্ত থাকে। খাবারে নিয়ম আনি, প্রাকৃতিক খাবার, বেশি পানি, কম লোভ। কাজের চাপ যতই থাকুক, নিজের শরীর আর মনের যত্ন না নিলে কিছুই টেকে না। আমি এখন বুঝেছি, সুস্থ থাকা মানে শুধু অসুস্থ না থাকা নয়, বরং প্রতিদিন সচেতনভাবে বাঁচা। এখন আমি ধীরে চলতে শিখেছি, কারণ শান্তি কখনো তাড়াহুড়োর মধ্যে আসে না। রবীন্দ্রনাথের সেই গানের লাইন, “যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে...” প্রতিদিন মনে করিয়ে দেয়, জীবন একদিন থেমে যাবে, কিন্তু ভালো কাজ আর ভালোবাসা থেকে যাবে।

আমি চাই আমার জীবনটা হোক সহজ, কিন্তু গভীর। আমি চাই এমন দিন, যেখানে সকালটা শুরু হবে আলোয়, দুপুরটা যাবে কাজে, আর রাতটা শেষ হবে কৃতজ্ঞতায়। আমার সবচেয়ে বড় বিশ্বাস, যে মানুষ নিজেকে ভালোভাবে চেনে, সে পৃথিবীকেও ভালোভাবে বোঝে। আমার লক্ষ্য এখন বড় কিছু না, বরং ভালোভাবে বাঁচা। একদিন যদি আমি না-ও থাকি, তবু চাই আমার কাজ, আমার শিশু, আমার ভালোবাসা এই পৃথিবীতে কিছুটা আলো রেখে যাক। আমি এখন আর দৌড়াতে চাই না, আমি হাঁটতে চাই, ধীরে, নিজের সঙ্গে, নিজের মতো করে।

Comments