শাহবাগে মেট্রো স্টেশনের নিচে ১০ বছরের শিশুকে ধ - র্ষ - ণ,

 ১. সকালটা এর থেকে বাজে ভাবে শুরু হতে পারতো না, দৈনিক ইত্তেফাকের খবর - 


শাহবাগে মেট্রো স্টেশনের নিচে ১০ বছরের শিশুকে ধ - র্ষ - ণ, 


রাজধানীর শাহবাগে মেট্রো স্টেশনের নিচে (১০) বছরের এক পথশিশু ধ - র্ষ - ণের শিকার হয়েছে। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 


হাসপাতালে আরেক পথশিশু মোবারক জানান, ওই শিশু শাহবাগ এলাকায় ফেরি করে ফুলের মালা বিক্রি করে। রাতে মেট্রো স্টেশনের নিচে শিশুটির চিৎকার শুনে অনেক লোকজন জড়ো হয়। সেখানে গিয়ে দেখি ওই শিশু রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে। আর ওই ছেলেকে লোকজন ধরে রেখেছে।”

পথশিশু মোবারক মজার ইশকুলের শিক্ষার্থী, যে শিশুটির উপর নির্যাতন করা হয়েছে আর যে করেছে তারাও পরিচিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। শাহবাগে গেলেই বিস্তারিত জানতে পারবো। 


যেখানে শিশুরা বাসায় নিরাপদ না সেখানে রাস্তায় ঝুঁকি শতগুণ বেড়ে যায়। 


এই ঝুঁকি এড়াতে উদ্দ্যানে থাকা মায়েরা কি ধরনের উদ্যোগ নেয়, তার একটাধারণা দিচ্ছি। তার আগে গত ১৪ জানুয়ারি মজার ইশকুল ধানমণ্ডি শাখায় মরিয়ম নামের একটা ছোট্ট পরীর সাথে দেখা হওয়ার ঘটনাটা  বলি। 





২. মজার ইশকুল সেই ২০১৩ সাল থেকে পথশিশুদের নিয়ে নানামুখী কাজ করছে, তার ভিতর খোলা আকাশের নিচে পরিচালিত ইশকুল গুলোকে আমরা UTSMS ( Under The Sky Mojar Shool ) নামেই চিনি। এটা প্রতি মঙ্গলবার রবীন্দ্র সরোবরে ক্লাস নেই আছরের পর মাগরিবের আগ পর্যন্ত । আমি ব্যক্তিগত ভাবে সব ক্লাসে উপস্তিত থাকতে পারি না স্বাভাবিক ভাবেই। 


এই দিন আমি ছিলাম, ভিডিওটা আমার রেকর্ড করা, একটা ছোট্ট পরী ফুল নিয়ে স্কুল দিয়ে দৌড়ে আসছে, সাথে তার মাও ছিল। একটা পাত্রে  লাল  গোলাপ, ক্লাসে বসার আগে কিছু ব্যসিক তথ্য নিচ্ছিলাম মজা করতে করতে। 


নাম মরিয়ম, বয়স জিজ্ঞেস করা হয়নি, সপ্তাহ খানেক হবে ধানমণ্ডি ফুল বিক্রি করে মায়ের সাথে। বাসা কামরাঙ্গির চরের কাছাকাছি বালুর মাঠের কাছে, ভিডিও তে বলছিল সে মাদ্রাসায় পড়ে, অফ রেকর্ড মরিয়মের মা জানাচ্ছিল সে আসলে ধানমন্ডিতেই মজার ইশকুল মত আরেকটা স্কুলে পড়ে সকালে বিকেলে ফুল বিক্রি করে। ধানমণ্ডি থেকে বাসায়যেতে ১০০/১২০ টাকা ভাড়া লাগে আসা যাওয়ায় রিকশায়। ফুল বিক্রি না, বরং পড়তেই ভালো লাগে তার। আজকে কতগুলো ফুল বিক্রি করেছে সে জানে না আর মজার ইশকুলের সকল শিশুদের সাথে সেও ফুল বিক্রি রেখে পড়তে আসছে। 


এমন ১০ বছরের আশে পাশের কাউকে দেখলেই আমার শান্তার কথা মনে পরে, যে মেয়েটি সামান্য মাসিক ২০০০/৩০০০ টাকার খরচের টাকা মা বাবা দেয় আর বড় বোন সেটা মানতে পারে না বলে মানসিক যন্ত্রনা দেয়ায় সুইসাইট করেছিল ২০২৪ সালে । এটা আমার সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয় না আসলে, এটা অটোমেটিক সেট হয়ে গেছে অর্থের অভাবে এই মেয়েরা যাতে রাস্তায় না নামে এবং জীবন থেকে ছুটি না নেয়। 


আমাদের একজন সম্মানিত ডোনারকে সাথে সাথে মরিয়মের কথা জানালাম, সে দ্রুত রেস্পন্স করলো। মরিয়মের মায়ের নাম্বার আমি নিয়ে রেখেছি, ওর বাসায় যাব এবং কিভাবে মরিয়মকে রাস্তা থেকে বাসায় রেখে পড়াশোনা করানো যায় তা দেখবো। 


৩. এবার শাহবাগে ব্যাক করি, 


 করোনার কারনে আমাদের ন্যাশনাল কারিকুলাম বেজ স্কুল গুলোকে গুরুত্ব দিতে হয়েছে, শেষ ২ বছর সেখানে একটা টিম তৈরি হয়ে যাওয়ায়, গত ৩/৪ মাস ধরে আমি ওপেন স্কুল গুলোতে নিয়মিত হয়েছি। ব্যাকগ্রাউন্ড বলার কারন, ২০১৩ সালে আমি যাদের পড়িয়েছি তারা সবাই শুধু বিয়েই করেনি, একাধিক সন্তান আছে তাদের। ঐ সময়ে শাহবাগে যারা জন্ম গ্রহন করেছে তাদের বয়স কোন ভাবেই ১২ বছরের বেশী না। এমন একজন শিশুর নাম পুতুলী। গত মাসে মানে ডিসেম্বর মাসের একাধিক বার শাহবাগে যাওয়া হয়েছে সেখানেই কথা হয় পুতুলিসহ অন্য মেয়েদের সাথে যাদের অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে। অনেক লম্বা আলোচনার দুইটা পয়েন্ট আমাকে অবাক করেছে। 


এরা সংসার কি বোঝার প্রশ্নই আসে না তবুও বিয়ে করে কারন ,


১) দেনমোহর থাকে ৫০,০০০ - ১,০০,০০০ টাকা । যদি বিয়ে ভেংগে যায় এই টাকা নুদ মেয়েকে দিতে হবে, এটা মেয়ের জন্য এক কালিন আর্থিক নিরাপত্তা । যদি না দিতে পারে তবে ছেলেকে এই উদ্যান এলাকা ছাড়তে হবে, স্থায়ী বা সাময়িক। 


২) নিরাপত্তা, যার স্বামী আছে তার দিকে অন্য ছেলেরা সহজেই ভিরতে পারে না, মেয়ে এবং তার অভিভাবক এটাকে নিরাপদ মনে করে। এরা সবাই কামরাঙ্গির চর এলাকায় ৬,০০০ - ১০,০০০ টাকারভিতর বাসা নেয়। ছেলে ফুটপাতের দোকানে কাজ করে,  কেউ কেউ নিজেও দোকান দেয়, যদিও সব অস্থায়ী। মেয়েরা ফুল বা মাদক বিক্রির অর্থ থেকে পরিবারে অর্থের যোগান দেয়। 


একটা নোট জরুরী - ২০১৩ সালে আমরা যখন উদ্যানে কাজ শুরু করি, এই শিশু বা তাদের পরিবার সরাসরি মাদক বিক্রিতে জড়িত ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ে ওপেনলি মাদক বিক্রি কমন হয়ে গেছে যেখানে ১০ বছরের শিশু থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধ সবাই মাদক বিক্রি করে যা উদ্বিগ্ন হওয়ার থেকে বেশী। আমরা যারা শিশুদের নিয়ে কাজ করছি, এই লেখার মাধ্যমে দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। 


৪. প্রতিটা শিশুর নিরাপদ, উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। শিশু কেন পথে দায়িত্বশীলরা কেন তার উত্তর দিবে না, এই প্রশ্ন জারি রাখতে হবে আমাদের। কোন শিশুই পথে বা অন্য কোথাও ধর্ষিত হোক তা আমরা দেখতে চাই না । 



আরিয়ান আরিফ 

১৬ জানুয়ারি ২০২৫

মজার ইশকুল 


Comments