রায়ানদের কেনা ক্লাবের নাম Wrexham AFC
আমেরিকান ধনীদের ইংলিশ ফুটবলে বিনিয়োগ নতুন না। প্রিমিয়ার লিগের প্রায় অর্ধেক ক্লাবের মালিক আমেরিকান; বড় ক্লাবগুলার মধ্যে আর্সেনাল, চেলসি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুলের মালিক আমেরিকান। ফুটবল বৈশ্বিক খেলা, মিডিয়া রাইটস অনেক টাকায় বিকোয় আর NFL/NBA ক্লাবের চেয়ে দাম কম; আমেরিকান বিলিয়নাররা তাই 'দামে কম মানে ভালো' প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব কেনেন।
বিলিয়নাররা বড় ইনভেস্টমেন্ট করবে, বড় ক্লাব কিনবে সেটাই স্বাভাবিক কিন্তু অন্যরকম কাজ করছেন হলিউড তারকা রায়ান রেনল্ডস এবং রব ম্যাকএলহেনেই।
রায়ান এবং রব কিনছেন বয়সের বিচারে পৃথিবীর তৃতীয় পুরাতন প্রফেশনাল ফুটবল ক্লাব। অবাক করা ব্যাপার হলো ক্লাবটা প্রিমিয়ার লিগ তো দূর, সেকেন্ড ডিভিশনেরও ক্লাব না; ওরা খেলে ৫ম ডিভিশনে। আর ক্লাবটা উনারা কিনছেন মাত্র ২.৫ মিলিয়ন ডলার দিয়ে।
ফুটবল, ক্রিকেট আমাদের মতো দর্শক/সমর্থকদের কাছে যাইই হউক; মালিক, চ্যানেল, মিডিয়ার কাছে দিনশেষে ব্যবসা, এন্টারটেইনমেন্ট বিজনেস। তাই রায়ান এবং রব এতো ক্লাব বাদ দিয়ে কেন ৫ম ডিভিশনের একটা ক্লাবকে কিনলেন, আর যদি কেনেনই, সেখান থেকে টাকা ইনকাম করবেন কিভাবে এই প্রশ্ন খুবই প্রাসঙ্গিক!!
আর এখানেই এই গল্পের মজাটা।
রায়ানদের কেনা ক্লাবের নাম Wrexham AFC। ওয়েলসের রেক্সহাম নামের ছোট একটা শহরের, যেটা লিভারপুল আর ম্যানচেস্টার থেকে প্রায় ২৫ মাইল দূরে, এই ক্লাবের শুরু ১৮৬৪ সাল থেকে। ফুটবলের আধুনিকায়ন, যথাযথ পরিচালনার অভাবে অনেক বড় ক্লাবই হারায়ে গেছে, রেক্সহামও এমন একটা ক্লাব। কালের বিবর্তনে প্রায় ১৬০ বছরের পুরানো এই ক্লাবটা হয়ে গেছে 'পাড়ার ক্লাব'।
ইউরোপের আরো অনেক ক্লাবের মতো রেক্সহামের মালিক ছিলো সমর্থকরা, রায়ান আর রব এই সমর্থকের মধ্যে ২০০০+ জনের সাথে জুম কলে কথা বলে ক্লাব কেনার প্রস্তাব দেন এবং সমর্থকরা তাতে রাজি হয়৷ উনারা প্রায় ২.৫ মিলিয়ন ক্লাবের খেলোয়াড়, স্টাফ এবং ফ্যাসিলিটির জন্য ইনভেস্ট করবেন এবং ক্লাবের স্টেডিয়াম ২৫ বছরের লিজ নিবেন এই মর্মে চুক্তি করেন। স্টেডিয়াম লিজ নেয়ায় ফ্যানদের মধ্যে একটা বিশ্বাস তৈরী হয় যে নতুন মালিকেরা তাদের সাথে বড় সময় ধরেই থাকবে।
আসল খেলা শুরু এরপরে।
রায়ান আর রবের এই ক্লাব সিলেক্ট করা, ইনভেস্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে শুরু করে কেনার পরে ক্লাবের প্রথম সিজনের জার্নি; সবকিছু নিয়ে একটা নেটফ্লিক্স স্টাইল ডকুমেন্টারি বানানো হয় যেটার নাম "Welcome to Wrexham"। এটা গত আগস্টে রিলিজ দেয়া হয় FXএ এবং সিরিজের প্রথম সিজন সুপারহিট হয়ে যায়৷ শো'টা ৯৭% অডিয়েন্স স্কোর পায় এবং এর দ্বিতীয় সিজনের আসবে সামনেই।
এই ধরনের সিরিজ বানাতে হলে চুক্তি করা লাগে ক্লাবের সাথে কারণ ক্লাবের ভেতর শুটিং হয়, প্লেয়ার/স্টাফদের বিহাইন্ড দ্যা সিন অনেক ব্যাপার দেখানো হয়৷ তো ক্লাব এই সিরিজের প্রথম সিজনের ৮ পর্ব থেকে ৪,০০,০০০ ডলার প্রতি ঘন্টা হিসাবে ৩.২ মিলিয়ন ডলার আয় করছে। মানে রায়ান আর রবের যে ইনিশিয়াল ইনভেস্টমেন্ট ২.৫ মিলিয়ন, তারচেয়ে বেশি টাকা শুধুমাত্র টিভি সিরিজের এক সিজন দিয়েই তারা তুলে ফেলছে। 💸
এখানেই খেলা শেষ না, বরং শুরু।
রায়ানের মতো বড় তারকার ক্লাব কেনা এবং এই সিরিজের সফলতার রেশ তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়ও পড়ছে। টুইটারে ৪০ হাজার থেকে ২,০৯,০০০ ফলোয়ার(৩৬৪% বৃদ্ধি), ইন্সটায় ২৭ হাজার থেকে ২,০৮,০০০ ফলোয়ার(৬৭০% বৃদ্ধি) এবং টিকটকে ০ থেকে ৪,৫৯,০০০ ফলোয়ার তাদের এখন৷
ক্লাব যেহেতু পরিচিত পাইছে, স্বাভাবিকভাবে স্পন্সররাও এখন ক্লাবের ব্যাপারে আগ্রহী। রেক্সহাম এখন পর্যন্ত টিকটক, এক্সপেডিয়া, ভিস্তাপ্রিন্ট, অ্যাভিয়েশন আমেরিকান জিন'র মতো কোম্পানির সাথে 'কিট স্পন্সর' চুক্তি করছে। ক্লাবের সিজন টিকেট ২০১৯এ কিনছিলো ২৬০৯ জন, ২০২২ সিজনের টিকেট কিনছে ৬৮২০ জন মানে প্রায় তিনগুণ বেশি সিজন টিকেট বিক্রি হইছে গত সিজনে৷ Blyth Spartansর সাথে ওদের এফএ কাপের কোয়ালিফায়ার সরাসরি সম্প্রচার করছে ESPN2 & ESPN+ মানে কিছুদিন আগেও নিতান্তই পাড়ার ক্লাব থাকা রেক্সহাম বিশ্বব্যাপী ১০০+ মিলিয়ন ঘরে পৌছাইছে যেটা কোনো রেক্সহাম সমর্থক হয়তো কিছুদিন আগে স্বপ্নেও ভাবেনি।
ওহ ভালো কথা!! টাকা, পরিচিতি হইছে; কিন্তু ক্লাবের আসল যে কাজ, ফুটবল খেলা, সেটার অগ্রগতি কেমন কি?
সেখানেও হতাশ করেনি রেক্সহাম। নিজেদের ডিভিশনে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ১৫ বছর পর তারা EFLএ ফিরে আসছে। সময়টা মাঠ এবং মাঠের বাইরে দুই জায়গাতেই ভালো যাচ্ছে রেক্সহামের।✌️
কিভাবে একটা লোকাল স্পোর্টস ক্লাবকে কিনে স্ট্র্যাটেজিক মার্কেটিং এবং ক্রিয়েটিভ মিডিয়া দিয়ে বৈশ্বিক দরবারে নিয়ে যাওয়া যায় সেটা রায়ান রেনল্ডস, রবি ম্যাকএলহেনেই খুব সুন্দরভাবে দেখালেন৷ রেক্সহাম এএফসি ক্রীড়া জগতে ক্রিয়েটিভ স্টোরিটেলিং এবং জিনিয়াস মার্কেটিংয়ের এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।
দিনশেষে ব্যবসা হলেও সমর্থকদের ভালোবাসাটা খাটি থাকে, রেক্সহাম সেই ভালোবাসা নিয়ে সামনে আগায়ে যাক। ওদের জন্য শুভকামনা।
Collected from Rafiul Sabbir
Comments
Post a Comment