ফ্রি স্কুল কিন্তু ভালো স্কুল

 থ্রি-ইডিয়টস - প্রতি রবিবার

এই মুভিতে একটা সিন আছে, সবাই বোর্ডে নিজের রেজাল্ট দেখছে। কে প্রথম আর কে দ্বিতীয়।



করোনা আসলো তখন মজার ইশকুল :: Mojar School জাষ্ট ক্লাস ফাইভ।
পথশিশুদের জন্য একটা একটা ইশকুল হবে, তারা ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত নিয়মিত পড়বে এমন অবাস্তব স্বপ্ন আমার শত্রুও দেখেনি। এক বাক্যে বলে দিছে, তরুণ বয়সে সবাই এমন পাগলামী করে।
একবার এক সরকারি কোয়াটারে একজন সরকারি রিটায়ার্ড কর্মকর্তার সাথে মিটিং ছিল। সব শুনলেন, মিশন - ভিশন জীবনে প্রথমবার তার কাছ থেকেই ক্লিয়ার হলাম। তার সারা জীবনের আফসুস, এমন একটি প্রতিষ্ঠান বানাবে, গরীব শিশুরা ফ্রি পড়বে, বৃদ্ধরা থাকবে। কিন্তু নানান কারনে পারেনি।
বিগত ১০ বছরে এমন আরও বেশ কয়েক জনকে পেয়েছি, যারা শুরু করেছিল, লেগে থাকতে পারেনি। সারা জীবন জব করেছে কিন্তু তৃপ্তি পায়নি। এমন অনেককে পেয়েছি, আমিও "করতাম" বলে অতীতের গল্প শোনায়।
উল্লেখ্য প্রতিটি বিষয় আমাকে সব সময় অনুপ্রানিত করেছে। এই যে এত বড় বড় সফল মানুষ অতৃপ্তি নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিয়েছে, আমাকে অন্তত তা করতে হচ্ছে না।
কিন্তু করোনা এসে সব হিসেব পালটে দিলো। যে কাজটা ভালোবেসে করছি সেটাও যায় যায় অবস্থা। বর্তমান সময়টা করোনার থেকে খারাপ কিন্তু অনিশ্চিত নয়।
প্রচন্ড ভালোবাসা আর সব লোভ লালসা, ফোকাস ঠিক না রাখতে পারলে হয়তো আমাকেও বলতে হত, "করতাম"। জীবনে যদি এমন দিন আসে আমি সে ব্যর্থতা মেনে নিবো তবুও ব্যর্থকে সামনে এনে আফসুসের গল্প করবো না কারো সাথে।
তরুণরা অস্থির, এই অভিযোগ। এটাকে অন্তর নিজের বেলায় মিথ্যা প্রমাণ করতেও লড়াইটা চালিয়ে যাব।
থ্রি ইডিয়টস এ আসি।
তো, এই করোনা যখন শেষ মজার ইশকুলের শিক্ষার্থীরা অটো পাসে ক্লাস সেভেন। পড়তে আনন্দ লাগলেও বাস্তবতা এভারেস্ট জয় থেকে কম নয়। কিভাবে এই এভারেস্ট জয় করতে গিয়ে বরফ ধশে পড়েছিল লিখবো আরেকদিন। আজকে উতরে যাওয়ার ঘটনা বলি।
আমি আমার টিমের সাথে প্রচুর, প্রচুর আলাপ করি। বোঝার চেষ্টা করি কি, কেন, কিভাবে? এই চ্যালেঞ্জটা সবার বেলায় সত্য, মতামত দেয়া আর সিদ্ধান্ত গ্রহণ আকাশ পাতাল পার্থক্য থাকলেও প্রায় সবাই মতামতের আড়ালে সিদ্ধান্ত দিয়ে দেয় বা দিতে চায়, অনেক সময় বাধ্যও করে। একজন সিনিয়র টিচার এক আলোচনা মতামত দিলেন, আমরা সাপ্তাহিক পরীক্ষা নিলে এর ভাল সমাধান সম্ভব, সিদ্ধান্ত যাতে অফিস নেয়।
এমনিতেই আমরা সপ্তাহে ৫ দিন ক্লাস নেই, শনিবারও ছুটি, অন্য স্কুল যেখানে ৬ দিন। এর ভিতর ৪ দিন পড়িয়ে ১ দিন পরীক্ষা নেয়া লাগাতার ৫২ সপ্তাহ, চ্যালেঞ্জিং।
নিলাম সিদ্ধান্ত।
সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এত বেশী চ্যালেঞ্জ ছিল, তা নিয়ে লিখলে ৫ পাতা হবে।
ফলাফল বিগত ১০ মাসে করোনা গ্যাপ অনেকটা কাটাতে পেরেছে মজার ইশকুল, যা স্বাভাবিক নিয়মে হলে হয়তো সম্ভব হত না।
তো, প্রতি রবিবার এভাবে যখন কোন শিক্ষার্থী তার টোটাল নাম্বার খুজে, দেখতে ভীষণ ভাল লাগে।
মজার ইশকুল এখন লোকাল কমিউনিটিতে,
ফ্রি স্কুল কিন্তু ভালো স্কুল।
এই ভাল ইশকুল প্রতিষ্ঠা করা, করোনা সময়ের পরে একটা বিশাল লড়াই। আপাতত উতরে গেছি। জয় - পরাজয় জানাবো ডিসেম্বর শেষ করে জানুয়ারি ২০২৩ সালে।

Comments