"জিসান ও তার মা"
"জিসান ও তার মা"
তার নাম জিসান। টিএসসিতে যাদের নিয়মিত যাতায়াত তারা অনেকেই ওকে চিনবেন।
ওকে দেখে ওর জীবনটা দেখে আমি বিশ্বাস করেছি “মায়ের থেকে মাসীর দরদ বেশি” কথাটাকে। হ্যাঁ, জিসানের একজন মা আছেন। একজন বাবার নাম বলে, কিন্তু যথারীতি তিনি থেকেও নেই। জিসান কিন্তু একদমই ছোট্ট একজন বাচ্চা। ওর বয়স ০৫ বছর। সারাটাদিন এখানে ওখানে ঘুরে, মানুষকে বিরক্ত করে, কখনো কখনো মারধোর খেয়ে ও যেটুকু আয় করে ওর মা রাতে সেগুলো নিয়ে নেন। এবং পুরো দিনে তাকে জিসানের আশেপাশে দেখা যায় না কখনোই। মায়ের মমতা কি জিসান বোঝেনি জন্মের পর থেকে অনেকদিন। এরজন্য ওর মাকে কখনোই দায়ী করবো না। দারিদ্র্য, প্রতারনা কিংবা আমাদের সমাজ ব্যবস্থা তাকে সুস্থ থাকতে দেয়নি। নিজেরাই যাকে অপ্রকৃতস্থ করে ফেলেছি দিনের পর দিন, একজন “মা” হয়ে ওঠা তার কাছ থেকে আশা করা অন্যায়।
এরপর জিসান একদিন মায়ের আদর পেয়েছে, বুঝেছে আর মনে রেখেছে। আজকের গল্প ওর আর ওর মায়ের।
জিসানের এই মা টির নাম ফারজানা। বলাই বাহুল্য, সে মজার ইশকুল :: Mojar School এর স্বেচ্ছাসেবী। সপ্তাহে একটি দিনই সে সুযোগ পেত শাহবাগ পয়েন্ট এর যাওয়ার। কারন মজার ইশকুলঃ আগারগাঁও এর একজন শিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ঢাকা শহর এর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে হত তাকে, আগারগাঁও থেকে শাহবাগ।
জিসান পুরোদিন ধূলা-ময়লার মধ্যে গড়াগড়ি করে। প্রচন্ডরকম অপরিষ্কার থাকে তার পুরো শরীর। জিসানের মায়ের প্রথম কাজটি হল ওকে গিয়ে গোসল করানো। ধুয়ে-মুছে ফুলবাবু সাজিয়ে ক্লাসে নিয়ে আসা। বাকি সময় তার কাটে মায়ের কোলে কোলে।
জিসান তাকে মা বলে জানে। ও সবার নাম ভুলে যায়, মনে রাখতে পারে না। ছোট মানুষ যে! কিন্তু মায়ের নাম জানে, কখনোই ভোলে না।
ফারজানা আক্তার, জিসানের মায়ের দায়িত্ব বেড়েছে। পথশিশুমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য তার কাজের পরিধি অনেকটুকু বেড়ে গিয়েছে। এখন তাই আর আসতে পারেন না শাহবাগ পয়েন্ট এ।
শুধু কোলে নিয়ে আর গোসল করিয়ে মা হওয়া যায় না, সম্পর্কও মজবুত হয়না। দৃষ্টিসীমার বাইরেও অনেক কিছুই ঘটে, যা কেবল উপলব্ধি করা যায়। তাই দীর্ঘদিন দেখা না হওয়ার পরেও তার ছেলে কিন্তু তাকে ভোলে নি।
সেদিন জিসানকে কোলে নিয়ে বসে ছিলাম। আমার ফোনে ফারজানা আপুর ছবি দেখে সে ভীষন এক্সাইটেড হয়ে চিৎকার, "ফারজানা, ফারজানা!!!"
জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে??
ভীষন সুন্দর একটা হাসি দিয়ে উত্তর দিলো, "মা!"
-----
আমি নিজেকে কখনো আবেগী মানুষ হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেই না , কোন লেখা পড়েও ( এক মাত্র মুক্তিযুদ্ধের বই বাদে ) কখনো আমি কেঁপে উঠি না , খারাপ লাগে না । কিন্তু জিসান, ফারজানা, ফারিহা, মজার ইশকুল, শাহবাগ এই বিষয় গুলোর সাথে আমি এতোই ওতপ্রোত ভাবে জড়িত বুকের ভিতর কেমন জানি হাহাকার লাগছে , জিসানকে ভীষণ মিস করছি । অনুভব করার চেষ্টা করছি মা আর ছেলের দেখা হলে কেমন হবে অনেকদিন পর । Fareha Khanm এতো সুন্দর করে লেখার জন্য ধন্যবাদ, সম্পর্কগুলো লেখার মতই আবেগী আমি জানি ।
March 7, 2018
Comments
Post a Comment