প্রিয়জন নাকি, প্রয়োজন ?
কারো প্রিয়জন না, প্রয়োজন হতে চাই
ভাবনা গুলো অগুছালো, আবার ফেলেও দিতে পারি না । আজকে যে বিষয়টা নিয়ে লেখা শুরু করলাম তার বিষয় বস্তু সাংঘাতিক! মানসিক প্রশান্তি হোক বা ভালো থাকার চেষ্টার ফল হিসেবে মানুষ সবার প্রিয়জন হতে চায়। এটা মানতে পারে না, প্রয়োজন কেন হবে না? প্রয়োজন শেষে কেন ছুড়ে ফেলে দিবে ?
পৃথিবীর সব কিছু তো একটা ইকো সিস্টেমেই চলে, চলতেও হবে। না চললে এক সময় স্থবির হয়ে যাবে, যা আমরা কেউ চাই না।
এই ধরুন, পৃথিবীতে যদি মৃত্যু না থাকতো, বেঁচে থাকা কি এত অর্থবহ হত ? অথবা ছোট্ট একটা পৃথিবীতে আমরা সবাই যদি অন্তত কাল বেঁচে থাকতাম এই পৃথিবীকি বাস যোগ্য রাখা সম্ভব হত ? উত্তর হচ্ছে, হত না।
ইকো সিস্টেমের কারনেই, মৃত্যু ভয়ের হলেও সুন্দর।
জন্মের পর আমাদের প্রিয় জন মা, আশে পাশেও কেউ নেই। বুঝতে শেখার পর বাবা। আমাদের ধ্যান ধারণার সব কিছু এই দুইজনকে কেন্দ্র করে । বড় হওয়ার স্বপ্নের পুরোটা জুড়ে থাকে কিভাবে মা-বাবাকে ভালো রাখবো। তাদের স্বপ্ন পূরণ করবো, খুশি করবো। যেহেতু, জানি না আমাকে কেন্দ্র করে নিজেকে নিয়ে নিজের স্বপ্ন দেখার সময় সামনে আসছে!
এরপর আমরা বড় হই, প্রিয় মানুষের সন্ধান পেলে প্রথমে প্রথম সব থেকে প্রিয় এই দুইজনকেই প্রশ্ন করি, আমার সুখের জন্য তুমি / তোমরা কি করেছো ? আমি বলছি না সবাই এই প্রশ্নই করি। কেউ কেউ কাছাকাছি প্রশ্ন করে! করে না এমন সংখ্যা অনেক কম!
কেউ কেউ সামাজিক কারনে, কেউ কেউ বাধ্য হয়ে মা-বাবা পাশে রাখি। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি থাকলে অনেকেই বাধ্য হয়ে রাখি, কারন চলে না যাওয়া পর্যন্ত অর্থ হস্তগত করা যায় না। যাদের এই বাধ্যবাধকতা নেই, তারা এতো ধৈর্য ধরে বলেই নিয়মিত বৃদ্ধাশ্রম বাড়ছে। তাই নয় কি ?
যেহেতু আমার ব্লগ, আমি একজন ছেলে হিসেবেই লিখছি তাই ছেলের পয়েন্ট থেকেই যদি দেখার চেষ্টা করি।
প্রিয়জনকে পাওয়ার জন্য, অনেক কিছু করি যা রোম্যান্টিক প্রেমিক হিসেবে আমাদের সমাজে স্থান দেয়, বন্ধু মহলে জনপ্রিয়তা দেয়। এক সাথে পথচলার সুযোগ পায় বেশীর ভাগ মানুষ, কেউ কেউ না পাওয়ার দুঃখ নিয়ে বাচে আর কেউ কেউ শোকে ভাসিয়ে চলে যায়।
প্রিয়জনকে পাওয়ার পর সামাজিক স্টাটাস না মিললে অথবা সামাজিক রীতি মেনে, "ছেলে তো সারাজীবন মায়ের আঁচল ধরে থাকবে না", রীতি মেনে নতুন পথচলা শুরু হয়। যেখানে প্রিয়জন পালটে যায়। জন্মের সময়ের প্রিয়জন হয়ে যায় শুধুই দায়িত্ব পালনের অংশ। মাসে একবার ফোন, বছরে একবার দেখা, মাসিক কিছু টাকা। প্রিয়জন নিয়ে অভিযোগ জানানোর জায়গা কি প্রিয়জনের থাকে? নাকি প্রয়োজনে বাঁধা পড়ে ?
এবার সন্তান আসার পর পুরোটা জুড়ে সন্তান, পৃথিবী একদিকে আর বাকী সব এক দিকে। শেষ কবে প্রিয়জনের সাথে, এক সাথে ফুচকা খেতে যাওয়া হয়েছে! সংসারের নানান ঝামেলায় তা মনে থাকে না । বাসা ভাড়া, নিত্য দিনের খরচ, রিলেটিভস, সন্তানের ইশকুলের খরচ, নিশ্চিত ভবিষ্যৎ দেখেন এখানে কোথাও প্রিয়জন নেই কিন্তু প্রয়োজন আছে । আপনি চাইলেই বলতে পারেন, প্রিয়জনের জন্যই তো করছি। আমিও তাই বলি, তবে মনে করিয়ে দেই প্রয়োজন আগে প্রাধান্য পাচ্ছে কিন্তু! মিট করতে না পারলে কি হবে, ভাবুন ?
ভুলে গেলে হবে না, নিজেদের বয়স বাড়ছে । সব ফোকাস যখন সন্তানের দিকে বাবা-মা ও বার্ধ্যকে চলে আসছে। মেডিকেল খরচ মাথায় রাখেন, এটা প্রয়োজন। প্রয়োজন মিট করতে না পারলে, প্রিয়জন হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে কিন্তু!!
সন্তান বড়, এবার আপনি বাবা-মা । এই ইকো সিস্টেম লুপের অংশ। আপনি পারেননি বাবা-মার কাঙ্ক্ষিত প্রিয়জন হয়ে থাকতে, বুকে হাত দিয়ে কতজন সন্তান বলতে পারে আমৃত্যু জীবনের প্রথম প্রিয়জনদের শতভাগ সন্তুষ্ট রাখতে পেরেছে।
একটু খেয়াল করেন, বাবা-মার প্রিয়জন হতে পারেননি সময়ের স্রোতে। একদম ছিলেন না তা কিন্তু বলছি না। সন্তানের প্রিয়জন হতে পারছেন না, সময়ের প্রয়োজনে। প্রয়োজন মিটাতে পারলেই প্রিয়জন থাকে বা ধরে রাখা যায়।
প্রয়োজন না মেটাতে পারলে প্রিয়জনও হিংস্র হয়ে উঠে, এই সত্যি তো আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না। এটা নিশ্চিত হতে জ্ঞানী হওয়ার দরকার নেই। এটা মানুষের জন্ম-মৃত্যুর ইকো সিস্টেম। আপনি বা আমি তৈরি করিনি। স্বয়ং আল্লাহ করেছেন, কিভাবে পাল্টাবেন?
অনেকেই মন খারাপ করে, চায়ের আড্ডায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা করে , কষ্ট পায় সে কেন কারো প্রিয়জন না, কেন প্রয়োজন শেষে ছুড়ে ফেলে দেয়। এটা অন্যায় ব্লা ব্লা ......
এই মানুষ গুলো সঙ্গত কারনেই জানে না বা জানলেও স্বীকার করতে চায় না, অতিরিক্ত ভালোবাসা, অতিরিক্ত কেয়ারও একই রকম ভয়ংকর খারাপ, কষ্টের । যতটা কষ্টের, প্রয়োজন শেষে ফেলে দেয়ার ।
আমি যেহেতু এই ইকো সিস্টেমের বাহিরের কেউ না, তাই কারো প্রিয়জন হয়ে আমৃত্যু কাটিয়ে দিব এই ভাবনা মাথায় স্থান দেই না। প্রয়োজন হয়েই কাটিয়ে দিতে চাই এক জীবন। অন্তত প্রয়োজনের ভিত্তিতেও হলেও কেউ ভালোবেসে, কেউবা বাধ্য হয়ে কাছে ডাকছে, প্রিয়জন হওয়ার চেষ্টা করছে। চলুক না জীবন এভাবে।
আমি কারো প্রিয়জন হতে চাই না, প্রয়োজন হতে চাই ।
( নোটঃ ব্যক্তিগত জীবনের সাথে মেলানোর চেষ্টা না করাই বুদ্ধিমানের কাজ। জীবন নামের সমুদ্র থেকে একটা বিষয় এভাবে লিখে তুলে না অসম্ভব। )
Comments
Post a Comment